শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন
লোকমান হাকিম : মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মিজ্জিরপাড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব জালাল আহমদ। গত ৪ মাস ধরে তার পুত্র মনিরুল ইসলাম (২২) মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দালালের প্রলোভনে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাত্রা দিয়েছিলেন এ যুবক।
মনিরুল ইসলামের পিতা জালাল আহমদ বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল ছেলেকে বৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠাবো। এ জন্য ছেলের জন্য পাসপোর্ট করিয়েছিলাম। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর কাউকে না কিছু জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মনিরুল। পাঁচদিন পর ফোন করে দালালের কাছে টাকা পাঠাতে বলেন। তবে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠাতে পারিনি।’
ফেব্রæয়ারির প্রথম দিকে (তারিখ বলতে পারেননি) ছেলের সাথে ফোনে কথা বলেছেন জালাল আহমদ। তিনি জানান, তার ছেলে মিয়ানমারের মান্দালয় রাজ্যের দিয়াপুর কারাগারে বন্দি আছেন। তার কয়েদি নম্বর- ০০১২৮। এরপর থেকে ছেলেকে দেশে ফেরাতে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এ চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন জালাল।
শুধু তিনি নন, একই অবস্থা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মিজ্জিরপাড়া গ্রামের আরো তিন পরিবারের। মনিরুলের সাথে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারের একই কারাগারে বন্দি আছেন ্ওই গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র মো. রাশেল (২৪), নাছির উদ্দিনের পুত্র ওমর ফারুক (২৮) ও আবু জাফর মাঝির পুত্র শুক্কুর আলম (৩০)। তাদের কয়েদি নম্বর- ওমর ফারুক ০০১২৯, মো. রাশেল ০০১৩০ ও শুক্কুর আলম ০০১৩১।
মো. রাশেলের পিতা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ডিসেম্বরের নিখোঁজ হওয়ার পর দালালরা যোগাযোগ করেন। দালালদের কথামতো দেয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে ইসলামী ব্যাংক মহেশখালী শাখার মাধ্যমে তিনজনের জন্য ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠাই। কিন্তু এরপর থেকে দালালেরা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
ওমর ফারুকের পিতা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সাগরে ভাসার ১২ দিন পর মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়লে সেখানকার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের আটক করে। এরপর খবর আসে তারা মিয়ানমারে বন্দি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রæয়ারি কারাগার থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ফোনে তারা তাদের কয়েদি নম্বর বলেন। তারা জানিয়েছে, সেখানে অসহায় অবস্থায় দিন পারছেন। টাকা ছাড়া একবেলার বেশি খাবার দেয় না। এসময় চার জনের ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।’
এদিকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৪ পরিবার। এজন্য ভুক্তভোগীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ বলেন, ‘মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে চার যুবক মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়টি জেনেছি। তাদের ফিরিয়ে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে তাদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘চার যুবক মিয়ানমারে বন্দি থাকার বিষয়টি পরিবারের মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়েছে। কিভাবে তাদের ফিরিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাপ করবো।’
এ ব্যাপারে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘বছরের পর বছর নতুন করে পাচারকারী চক্র গড়ে উঠছে। তাদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি পাচারের শিকার হয়ে বিদেশের কারাবন্দি থাকা ব্যক্তিদের ফেরাতে সরকারের তৎপর হওয়া উচিত।’
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply